সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হৃদরোগ প্রতিরোধ...
হার্ট ব্লক যাবে চেনা
যদি থাকে এনজিনা
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, প্রায়ই যত আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ শোনা যায় তার মাঝে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। প্রতি বছর বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে (যেসকল রোগের কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়) অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (WHO) তথ্য মতে, সারা পৃথিবীতে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে হৃদরোগ প্রথম স্থান দখল করে আছে। এই মৃত্যুর হার কেবলমাত্র হৃদরোগীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন।
হৃৎপিণ্ড বা হার্টের রক্তনালিতে চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে ব্লকের সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে এটাকেই হার্ট ব্লক বলা হয়। হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকার ফলে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এ অবস্থায় হৃৎপিণ্ড তার চাহিদামতো রক্ত সরবরাহ না পাওয়ায় হার্টের কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হতে থাকে।
যেসব ব্যক্তি সামান্য পরিশ্রমকালীন সময় বুকব্যথা, বুকে চাপ অনুভব, বুক ধড়ফড় ও অত্যধিক পেরেশান হয়ে পড়েন। এসব উপসর্গকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলা হয়।
কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করছেন কাজকর্ম করতে গেলে আগের চেয়ে বেশি হাঁপিয়ে উঠছেন। এবং শরীর বেশি ঘেমে যাচ্ছে। অত্যধিক গরম অনুভব করতে থাকেন। আগের মতো দ্রুত হাঁটতে পারছেন না। কারও কারও বুকে চাপ অনুভূত না হয়ে বুকের মাঝখানে বা ডানে-বামে ব্যথা অনুভূত হয়, তার সঙ্গে নিঃশ্বাস ঘন ঘন হয়ে আসা ও বুক ধড়ফড় করা বা তার সঙ্গে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এসব উপসর্গের সঙ্গে মাথাঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা। অনেকের সামান্য পরিশ্রম করার সময় বুকব্যথা বা বুকে চাপ অনুভূত করার সময় ঘাড়ে, চোয়ালে বা পিঠে ব্যথা ধরে থাকার মতো অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলা হয়। তাৎক্ষণিক নিরাময় হওয়ার জন্য বেশিরভাগ মানুষই একে গ্যাসের উৎপত্তিকে দায়ী করে থাকেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করার ফলে মানুষের ধারণা আরও পরাভূত হয় যে এটা গ্যাসের জন্যই হচ্ছে এবং গ্যাসের ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে থাকেন কিন্তু গ্যাসের ওষুধ সেবন করেও এর থেকে মুক্তি পান না।
এবং এনজিনার ব্যথা খুব তাড়াতাড়ি নিরাময় হওয়ার ফলে অনেকে এটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চান না।
তবে মনে রাখা উচিত, এনজিনার ব্যথা হওয়ার প্রধান এবং একমাত্র কারণ কিন্তু হার্ট ব্লক। যা একটি মারাত্মক হৃদরোগ এবং কারও এনজিনা হতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।কারণ হার্ট ব্লক থেকে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। যার ফলে মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
যদি কেউ এনজিনায় আক্রান্ত হতে থাকে তবে বুঝতে হবে, তার হার্টের রক্তনালিতে ব্লক দেখা দিয়েছে এটা নিশ্চিত। এছাড়া কয়টা ব্লক আছে, ব্লকগুলো কোথায় অবস্থিত এবং এর কোনটা কত পার্সেন্ট ব্লক তা বোঝার জন্য এনজিওগ্রাম টেস্ট অবশ্যই করতে হবে। তবে বর্তমান সময়ে সিটি এনজিওগ্রামের মাধ্যমেও ব্লক নির্ণয় করা যায়। কেউ এনজিনায় আক্রান্ত হলে তার হার্টে ব্লক আছে এটা নিশ্চিত। তাই এ অবস্থায় একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বা কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও জটিলতর হতে পারে। তাই এ বিষয়ে আমাদের সকলের সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ রইল।
No comments