ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস পর্ব-০১

ডায়াবেটিস একটি বিপাক জনিত রোগ। আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারনে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সংগে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক কোন রোগ নয়।
বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস বললে সাধারাণতঃ ডায়াবেটিস মেলিটাস বোঝায়। তবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস নামে আরেকটি রোগ আছে যাতে মূত্র উৎপাদন বেশি হয় কিন্তু তা ADH অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন নামে অন্য একটি হর্মোনের উৎপাদনের অভাব বা ক্রিয়ার অভাবে হয়ে থাকে এবং মূত্রাধিক্য এবং তার জন্য অতিতৃষ্ণা এই দুটি উপসর্গের মিল ছাড়া এই রোগটির সঙ্গে "ডায়াবেটিস মেলাইটাস"-এর কোন সম্পর্ক নেই। এ দুটির মধ্যে ডায়াবেটিস মেলাইটাসের প্রকোপ অনেক বেশী। ডায়াবেটিস মেলাইটাস আবার দু'রকম হতে পারে। যথাঃ টাইপ-১ বা ইনস্যুলিন নির্ভরশীল এবং টাইপ-২ বা ইনস্যুলিন নিরপেক্ষ ডায়াবেটিস।
মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
ডায়াবেটিস হয়েছে কিভাবে বুঝবেন
ডায়াবেটিস হলে সাধারণত: যেসব লক্ষন ও উপসর্গ গুলো দেখা দেয়:
• ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
• খুব বেশী পিপাসা লাগা
• বেশী ক্ষুধা পাওয়া
• যথেষ্ঠ খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
• ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা
• ক্ষত শুকাতে দেরী হওয়া
• খোশ-পাঁচড়া,ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া
• চোখে কম দেখা
প্রশ্ন.১.কাদের ডায়াবেটিস হতে পারে?
উত্তর.যে কেউ যে কোন বয়সে যে কোন সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তিন শ্রেণীর লোকের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে:
• যাদের বংশে, যেমন-বাবা-মা বা রক্ত সর্ম্পকিত নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে
• যাদের ওজন অনেক বেশী
• যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কোন কাজ করেন না
• বহুদিন ধরে কর্টিনোল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে
প্রশ্ন.২. কি কি অবস্থায় ডায়াবেটিস প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
উত্তর.
• শারীরিক স্থূলতা
• গর্ভাবস্থা
• ক্ষত
• আঘাত
• অস্ত্রোপাচার
• মানসিক বিপর্যয়
• রক্তনালীর অসু্স্থতার কারণে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের রোগ
প্রশ্ন.৩. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে কি ধরনের বিপদ হতে পারে?
উত্তর.
• পক্ষাঘাত
• স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা
• হুদরোগ
• পায়ে পচনশীল ক্ষত
• চক্ষুরোগ
• মুত্রাশয়ের রোগ, প্রস্রাবে আমিষ বের হওয়া, পরবর্তীতে কিডনীর কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া
• পাতলা পায়খানা
• যক্ষা
• মাড়ির প্রদাহ
• চুলকানি
• ফোঁড়া
• পাঁচড়া
• রোগের কারণে যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া
• মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশী ওজনের শিশু, মৃত শিশুর জন্ম, অকালে সন্তান প্রসব, জন্মের পরই শিশুর মৃত্যু এবং নানা ধরনের জন্ম ত্রটি দেখা দিতে পারে
প্রশ্ন.৪. কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে?
উত্তর.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা বোঝার উপায় হচ্ছে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা। যদি খালি পেটে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ৬.১ মিলি মোল/লিটার থাকে এবং খাওয়ার পর ৮.০ মিলি মোল/লিটার পর্যন্ত হয়, তবে ডায়াবেটিস খুব ভাল নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। খাবারের পর রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ১০.০ মিলি মোল/লিটার পর্যন্ত হলে ডায়াবেটিস মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা এর চেয়ে বেশী হওয়ার অর্থ হলো ডায়াবেটিন নিয়ন্ত্রণে নাই।

No comments

Powered by Blogger.